২১শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে প্রবন্ধ
২১শে ফেব্রুয়ারি।
আজকের এই দিনটি আমরা পেয়েছি বহু ত্যাগের পরে।আজকের এই দিনটিকে কিনতে হয়েছিলো রক্তের বিনিময়ে আমাদের পূর্বসূরিদেরকে।
পৃথিবীর কোনো মানুষকে মায়ের ভাষার জন্য রক্ত দিতে হয়নি, পৃথিবী বুকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ভাষার জন্ম হচ্ছে, অসংখ্য ভাষা কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু আমাদের বাংলা ভাষাকে জোর করে বিলুপ্ত করার অপচেষ্টা করেছিলো পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যারা আমাদের চিরশত্রু। আমাদের পূর্বসূরিরা যতেষ্ট সচেতন ছিলেন, তাই আজ আমরা বাংলাকে পেয়েছি, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে পেয়েছি।
আজ আমরা পৃথিবীর বুকে সেই জাতি, যারা রাজপথে রক্ত ঢেলে দিয়ে মায়ের ভাষাকে পৃথিবীর বুকে টিকিয়ে রেখেছিল।
আমাদের বাংলা ভাষা নিয়ে যুগে যুগে ষড়যন্ত্র চলেছে, তাই মধ্যযুগীয় কবি আব্দুল হাকিমকে কঠোর হয়ে কবিতা লিখতে হয়েছিলো এদেশেই জন্ম নেওয়া বিদেশি সংস্কৃতি প্রেমিদের প্রতি-
"যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে না জুয়ায়।
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়।।"
যার অন্তরে বাংলার প্রতি ভালোবাসা নেই, কবি আব্দুল হাকিমের মতে, তার এদেশে বসবাসের কোনো অধিকার নেই।
যাইহোক, সব ষড়যন্ত্রকে উড়িয়ে দিয়ে বাংলা ভাষা টিকে থাকবে যুগ যুগ ধরে স্বমহিমায়।
আজকের এই রক্তে ভেজা ২১শে ফেব্রুয়ারি মনে করিয়ে দেয় সকল ভাষা শহিদদেরকে, যাঁদের রক্তের বিনিময়ে কেনা আমাদের আবেগ প্রকাশের বাংলা ভাষার প্রতিটি অক্ষর।
‘আবার এসেছে অমর একুশে
পলাশ ফোটানো দিনে,
এ দিন আমার ভায়েরা
আমায় বেঁধেছে রক্তঋণে।’
আজকের দিনটির জন্যই আমরা বাংলা ভাষায় বাংলা অক্ষরে আমরা মনের ভাব লিখতে পারি।
তাই আসো, আজকের এই দিনে আমরা শপথ করি-'আমরা প্রতিনিয়ত শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলবো, শুদ্ধ বানানে বাংলা লিখবো এবং বাংলা ভাষাকে ভালোবাসবো।'
চিৎকার করে বলে উঠবো- 'আমি গর্বিত, আমি বাঙালি, জয় বাংলা।'
চলো আজ এই একুশের দিনে প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে আমরা বাংলাকে মেলে ধরি বিশ্ব দরবারে, স্বপ্ন দেখি বাংলা দিয়ে বিশ্ব জয়ের, আজ থেকেই শুরু হোক আমাদের যাত্রা।
চলো আজ থেকে আমরা আমাদের নিজেদের নাম লিখি বাংলাতে, বাংলায় কবিতা পড়ি, বাংলায় গান গায়, বাংলাতে বাংলাকে বলি- ভালোবাসি।
চলো একবার সাহস করি বাংলাকে বুকে ধরবার। চলো একবার আমরা আমাদের পরিচয় জেনে নিই আজকের দিনে। চলো গুনগুনিয়ে পাঠ করি সৈয়দ শামসুল হকের 'আমার পরিচয়' কবিতাটি-
আমি জন্মেছি বাংলায়
আমি বাংলায় কথা বলি।
আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি।
চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।
তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে ?
আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে
আমি তো এসেছি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে।
আমি তো এসেছি কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে
আমি তো এসেছি পালযুগ নামে চিত্রকলার থেকে।
এসেছি বাঙালি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার থেকে
এসেছি বাঙালি জোড়বাংলার মন্দির বেদি থেকে।
এসেছি বাঙালি বরেন্দ্রভূমে সোনা মসজিদ থেকে
এসেছি বাঙালি আউল-বাউল মাটির দেউল থেকে।
আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারোভূঁইয়ার থেকে
আমি তো এসেছি ‘কমলার দীঘি’ ‘মহুয়ার পালা’ থেকে।
আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরীয়ত থেকে
আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে।
এসেছি বাঙালি ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে
এসেছি বাঙালি জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে।
এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে
এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে।
আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে
আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।
এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে
শুধাও আমাকে ‘এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে ?
তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির ইতিহাস শোনো নাই-
‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’
একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবোই
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।
পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের-
কখনোই ভয় করিনাকো আমি উদ্যত কোনো খড়গের।
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ;
একই হাসিমুখে বাজায়েছি বাঁশি, গলায় পরেছি ফাঁস;
আপোষ করিনি কখনোই আমি- এই হ’লো ইতিহাস।
এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান ?
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;
তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-
চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।
© আলমগীর কাইজার
২১.০২.২০১৮
আজকের এই দিনটি আমরা পেয়েছি বহু ত্যাগের পরে।আজকের এই দিনটিকে কিনতে হয়েছিলো রক্তের বিনিময়ে আমাদের পূর্বসূরিদেরকে।
পৃথিবীর কোনো মানুষকে মায়ের ভাষার জন্য রক্ত দিতে হয়নি, পৃথিবী বুকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ভাষার জন্ম হচ্ছে, অসংখ্য ভাষা কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু আমাদের বাংলা ভাষাকে জোর করে বিলুপ্ত করার অপচেষ্টা করেছিলো পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যারা আমাদের চিরশত্রু। আমাদের পূর্বসূরিরা যতেষ্ট সচেতন ছিলেন, তাই আজ আমরা বাংলাকে পেয়েছি, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে পেয়েছি।
আজ আমরা পৃথিবীর বুকে সেই জাতি, যারা রাজপথে রক্ত ঢেলে দিয়ে মায়ের ভাষাকে পৃথিবীর বুকে টিকিয়ে রেখেছিল।
আমাদের বাংলা ভাষা নিয়ে যুগে যুগে ষড়যন্ত্র চলেছে, তাই মধ্যযুগীয় কবি আব্দুল হাকিমকে কঠোর হয়ে কবিতা লিখতে হয়েছিলো এদেশেই জন্ম নেওয়া বিদেশি সংস্কৃতি প্রেমিদের প্রতি-
"যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে না জুয়ায়।
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়।।"
যার অন্তরে বাংলার প্রতি ভালোবাসা নেই, কবি আব্দুল হাকিমের মতে, তার এদেশে বসবাসের কোনো অধিকার নেই।
যাইহোক, সব ষড়যন্ত্রকে উড়িয়ে দিয়ে বাংলা ভাষা টিকে থাকবে যুগ যুগ ধরে স্বমহিমায়।
আজকের এই রক্তে ভেজা ২১শে ফেব্রুয়ারি মনে করিয়ে দেয় সকল ভাষা শহিদদেরকে, যাঁদের রক্তের বিনিময়ে কেনা আমাদের আবেগ প্রকাশের বাংলা ভাষার প্রতিটি অক্ষর।
‘আবার এসেছে অমর একুশে
পলাশ ফোটানো দিনে,
এ দিন আমার ভায়েরা
আমায় বেঁধেছে রক্তঋণে।’
আজকের দিনটির জন্যই আমরা বাংলা ভাষায় বাংলা অক্ষরে আমরা মনের ভাব লিখতে পারি।
তাই আসো, আজকের এই দিনে আমরা শপথ করি-'আমরা প্রতিনিয়ত শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলবো, শুদ্ধ বানানে বাংলা লিখবো এবং বাংলা ভাষাকে ভালোবাসবো।'
চিৎকার করে বলে উঠবো- 'আমি গর্বিত, আমি বাঙালি, জয় বাংলা।'
চলো আজ এই একুশের দিনে প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে আমরা বাংলাকে মেলে ধরি বিশ্ব দরবারে, স্বপ্ন দেখি বাংলা দিয়ে বিশ্ব জয়ের, আজ থেকেই শুরু হোক আমাদের যাত্রা।
চলো আজ থেকে আমরা আমাদের নিজেদের নাম লিখি বাংলাতে, বাংলায় কবিতা পড়ি, বাংলায় গান গায়, বাংলাতে বাংলাকে বলি- ভালোবাসি।
চলো একবার সাহস করি বাংলাকে বুকে ধরবার। চলো একবার আমরা আমাদের পরিচয় জেনে নিই আজকের দিনে। চলো গুনগুনিয়ে পাঠ করি সৈয়দ শামসুল হকের 'আমার পরিচয়' কবিতাটি-
আমি জন্মেছি বাংলায়
আমি বাংলায় কথা বলি।
আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি।
চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।
তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে ?
আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে
আমি তো এসেছি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে।
আমি তো এসেছি কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে
আমি তো এসেছি পালযুগ নামে চিত্রকলার থেকে।
এসেছি বাঙালি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার থেকে
এসেছি বাঙালি জোড়বাংলার মন্দির বেদি থেকে।
এসেছি বাঙালি বরেন্দ্রভূমে সোনা মসজিদ থেকে
এসেছি বাঙালি আউল-বাউল মাটির দেউল থেকে।
আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারোভূঁইয়ার থেকে
আমি তো এসেছি ‘কমলার দীঘি’ ‘মহুয়ার পালা’ থেকে।
আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরীয়ত থেকে
আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে।
এসেছি বাঙালি ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে
এসেছি বাঙালি জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে।
এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে
এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে।
আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে
আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।
এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে
শুধাও আমাকে ‘এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে ?
তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির ইতিহাস শোনো নাই-
‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’
একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবোই
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।
পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের-
কখনোই ভয় করিনাকো আমি উদ্যত কোনো খড়গের।
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ;
একই হাসিমুখে বাজায়েছি বাঁশি, গলায় পরেছি ফাঁস;
আপোষ করিনি কখনোই আমি- এই হ’লো ইতিহাস।
এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান ?
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;
তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-
চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।
© আলমগীর কাইজার
২১.০২.২০১৮
No comments