গল্পঃ আমার মিতু - ০১
গল্পঃ আমার মিতু - ০১
-আলমগীর কাইজার
আজ থেকে দুই বছর আগে মিতুর সাথে আমার পরিচয় হয়। অন্য পাঁচটা সম্পর্কের চেয়ে আমার আর মিতুর সম্পর্কটা একটু ভিন্ন।
পরিচয়ের এক বছরের মাথায় অর্থাৎ আজ থেকে এক বছর আগে আমরা বিয়ে করি। বিয়ের আগে কথা ছিল আমরা বিয়ের পর প্রচুর ঘুরাঘুরি করব। আমরা খুব দ্রুত নতুন কোন অতিথিকে আহবান করবো না, এতে আমাদের ঘোরাঘুরিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
আমাদের সম্পর্কটা ঠিক স্বপ্নের সমান বড় নয় কিন্তু আমরা যখন একসাথে হাঁটি তখন আমাদের সম্পর্কটাকে স্বপ্নের চেয়ে বেশি বড় বলে মনে হয়।
গত রোজার ঈদের কথা বলি। ঈদের আগে কথা ছিলো, ঈদের নামাজ শেষ হলে আমরা দুজন ঘুরতে বের হবো কিন্তু কি যেন অজানা কারণে নামাজ শেষে আমরা আর বের হলাম না। দুপুরের পর আমরা দুজন মিলে ফরেস্ট গাম মুভিটা দেখতে শুরু করলাম, এই মুভিটা এই এক বছরে বহুবার দেখেছি।
বিকালবেলা ভীষণ মন খারাপ হলো। আমাদের পাশের বাসার একটা ছেলে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে অ্যাকসিডেন্ট করেছে। সে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় একটা ক্লিনিকে ভর্তি আছে। ঈদের দিন, ক্লিনিকে ডাক্তার নেই, কয়েকজন নার্স আছে মাত্র। সেদিন আর আমরা ঘুরতে বের হই না।
ঈদের তৃতীয় দিন আমি আর মিতু বের হই। আমরা আমাদের কমদামী ফোনে সেলফি তুলে মেমোরি ভরিয়ে তুলি। এক পোজে দশ-বারোটা ছবি। সেই সব ছবির কোনটাই ডিলিট করিনি।
আজ হঠাৎ বসে-বসে সেইসব ছবিগুলো দেখছি। আমরা একদিন চলে যাবো, আমাদের ছবিগুলো স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকবে। তারপর যেদিন এই পৃথিবীতে আমাদের পরিচিত বলতে আর কেউ থাকবে না, সেদিন এসব সুন্দর মুহূর্তের ছবিগুলো অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে।
দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের এক বছর হয়ে গেলো। ছুটির দিন দুপুর বেলা, দেয়ালে হেলান দিয়ে আমি ফেসবুকে স্ক্রল করছি। মিতু ওর ফোনটা আমাকে দেখিয়ে বলে, ‘দেখো! দেখো! এটা তোমার মেয়ে। কতো সুন্দর, না?’
আমি মিতুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। একটু গম্ভীর গলায় বলি, ‘আমার মেয়ে, তোমার তো না। তুমি এত আনন্দিত হচ্ছো কেনো? ’
মিতু কোন কথা না বলে ফোনটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। মিতু যে কখন অভিমান করে আর কখন রাগ করে বোঝা বেশ মুশকিল।
রাতের বেলা। মিতু আমার দিকে না তাকিয়েই ফোন চাপতে চাপতে গাল ফুলিয়ে বলে, ‘আমরা কাল ঘুরতে যাব।’
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাই, ‘কোথায় যাবে?’
মিতু ক্ষীন কণ্ঠে বলে, ‘পূজা দেখতে।’
পরের দিন বিকালে আমরা বের হই। আমি একটা রিক্সা নিতে চাই কিন্তু মিতু হাঁটতে চায়। আমরা হাঁটতে শুরু করি। মিতু বলে, ‘জানো শিমুল, তোমার সাথে হাঁটতে আমার খুব ভালো লাগে। মনে হয় সারা জীবন ধরে হাঁটি।’
আমি বলি, ‘হুম।’
মিতু বলে, ‘হুম কী?’
আমি বলি, ‘আমাদের সাথে আমার মেয়েটা থাকলে আর হাঁটতে ইচ্ছে করবে না। কোলে নিতে হবে।’
মিতু বলে, ‘তোমার মেয়ে তুমি কোলে নেবে।’
আমি বলি, ‘আমার কোলে আসবে না।’
মিতু জিজ্ঞেস করে, ‘কেন আসবে না?’
আমি বলি, ‘আমার কাছে তো আমার মেয়ের খাবার নেই।’
মিতু কিছুক্ষণ চুপ থাকে, তারপর বলে, ‘ফাজিল কোথাকার!’
আমরা হাঁটতে থাকি। সত্যিই! আমার মনে হয় আমরা যেন সারা জীবন হাঁটতেই থাকি।
১৫.১০.২০১৮
© আলমগীর কাইজার
No comments