গল্প - কুরবানির ইদ এবং
ইদের দিন দুপুর বেলা, আমার কোনো কাজ নেই। কোরবানি ইদ, ঘোরাঘুরিতে মন নেই তাই অলস সময় কাটছে ঘরে বসে।
দুপুরের এই সময়টা কুরবানির মাংস বিতরণের সময়। আমাদের কুরবানি নেই তাই কাজও নেই। তবে শহরে থাকার কারণে একটা ঝামেলা আছে। দরজায় এসে অনেকে নক করে। এখানে কেউ কাউকে তেমন চেনে না। প্রতিবেশীরা প্রতিনিয়ত বদলে যায়।
দুপুর হওয়ার আগে থেকেই কুরবানির মাংস নিতে বাসার গেটে গেটে অনেক নারী, অল্প বয়সের ছেলেমেয়েরা আসে। হাতে মাংসের ঝোলা নিয়ে মাংস চেয়ে বেড়ায় ওরা। ওরা গেটে এসে বলে ‘গোস্তো দেন। এক পিচ দেন।’
শুনেছি সারাদিন এভাবে মাংস গুছিয়ে বেশ কয়েক কেজি মাংস হয় ওদের। কেউ কেউ খায়, অনেকেই অল্প টাকায় বিক্রি করে দেয়। যারা বিক্রি ক'রে দেয় তাদের বোধহয় মাংসের চেয়ে টাকার দরকার বেশি।
যারা কুরবানি দেন তাদের অনেকেই গরিবের অংশের মাংস ওদের দিয়ে দেয়। কিন্তু আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশীদের একটা অংশ আছে। সেটা তো বিতরণ করতে হবে! মনে করুন, আমি বাড়ি বসে আছি আর আমাকে কেউ একজন এসে একপিচ মাংস দিয়েছে! এখন বলুন তো আমি কী করবো?
কাউকে অপমান করা ঠিক হবে না, তাই হাত পেতে একপিচ মাংস নিতে হবে। যদি না নিই তবে তার মন খারাপ হতে পারে, কারোর মনে আঘাত দেওয়া ঠিক নয় তাই নিতেই হবে।
আমার প্রশ্ন একপিচ কিংবা দুইপিচ মাংস দিয়ে কী হয়? বলুন? কাউকে যদি খাবার দিতে হয় তবে অন্তত একবার খাওয়ার মতো খাবার দেওয়া উচিত (দুর্ভিক্ষের সময় ভিন্ন কথা) আর যদি সেটা রান্নার প্রয়োজন হয় তবে পরিবারে যতজন আছে সবার জন্য একবার খাওয়ার মতো খাবার দেওয়া উচিত।
শুধু কোরবানির মাংসই নয়, দায়সারাভাবে গণহারে ইদের শুভেচ্ছা-মেসেজ দেওয়াও ঠিক নয়। আন্তরিকতার সাথে অন্তত একজনকে ইদের শুভেচ্ছা জানান। সম্ভব হ'লে প্রিয়জনদের মধ্যে যতজন সম্ভব আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানান, দায়সারা মেসেজ পাঠানো ঠিক নয়।
হাজারো প্রশ্ন থাকলেও এই প্রচণ্ড রোদ-গরমে ঘামে ভিজে কষ্ট ক'রে কুরবানির মাংস কেটে আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী, গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে যাঁরা সুষ্ঠুভাবে মাংস পৌঁছে দিচ্ছেন তাদের জন্য স্যালুট!
ইদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক। ভালোবাসায় আর সম্প্রীতিতে জড়িয়ে থাকুক মানুষের হৃদয়। সুন্দর হোক পৃথিবী।
ইদ মোবারক!!!
© আলমগীর কাইজার
১২.০৮.২০১৯
No comments