মরার পর (প্রবন্ধ)

মানুষ মরে গেলে তাঁর উপর আমাদের দরদ উথলিয়ে পড়ে, মরা মানুষটিকে মাথায় তুলে নাচানাচি করি। যাঁকে কোনোদিন চিনতাম না, জানতাম না কিংবা খুব সামান্যই জানতাম, সবাই যখন তাঁকে নিয়ে কান্নাকাটি করে আমরাও তাদের সাথে যোগ দিই। (তবে কি আমরা কাঁদবো না? অবশ্যই কাঁদবো। কিন্তু তা যেনো মায়াকান্না না হয়।)

জানো, একটা মরা মানুষের জন্য কাঁদলে মরা মানুষটার কোনো লাভ হয় না। বেশিরভাগ সময়ই টিভি চ্যানেল, নিউজপেপার নিউজ বিক্রির জন্য মরা মানুষটাকে ব্যবহার করে। বেঁচে থাকতে যাঁর জায়গা হয়েছিলো পত্রিকার সবচেয়ে অচল পৃষ্ঠার অচল কলামে, বেঁচে থাকতে টিভি সাংবাদিকরা যাকে চিনতোই না, মারা গিয়ে সে হেডলাইন।

বেঁচে থাকতেই যদি মিডিয়া তাঁদেরকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতো তবে হয়তো মানুষ উপকৃত হতো আর তাঁর বেঁচে থাকাটা একটু হলেও আনন্দময় ও সম্মানজনক হতো। বেঁচে থাকা মানুষগুলোকে বাঁচানোর প্রয়োজন হয়, মরা মানুষকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করলে মরা মানুষের আত্মার কষ্ট হয়। (মরার পর যদি সে দেখতে পায় তাঁকে নিয়ে এতো আয়োজন, তবে হয়তো কষ্টে-অভিমানে থুথু ছিটাবে।)

মরা মানুষ নিয়ে ব্যবসা ভালো জমে। মৃত্যুর পর অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার বের হয়। সত্যের সাথে অল্প কিছু রূপকথা মিশিয়ে দিলে ভালো নিউজ বিক্রি হয়, তাঁকে নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে বই লিখলে ভালো কাটতি আসে। (বই লেখার ক্ষেত্রে মরা মানুষটাকে কোনোভাবে বেশ্যাবাড়ি থেকে ঘুরিয়ে আনতে পারলে কিংবা পরকীয়ায় যুক্ত করতে পারলে কেল্লাফতে।)

একবার ভেবে দেখো, আজ যে মানুষটা মারা গিয়ে বিখ্যাত হলো অথবা বিখ্যাত মানুষটা মারা গেলো, (ঠিক আগের দিন) গতকাল সেই মানুষটি একই মানুষ ছিলো। গতকাল তাঁর খোঁজ রাখোনি, আজ কেনো?

© আলমগীর কাইজার
০৯.০৫.২০২০








No comments

Powered by Blogger.