তিনজন ভ্রমণকারীর স্বপ্ন ১৯

ভিন্ন ধর্মের তিনজন ধর্মপ্রাণ পুরুষ 
দৈবক্রমে ভ্রমণে একসাথে পড়ে।
তারা একটি পান্থশালায় থামে 
যেখানে পান্থশালার মালিক উপহার হিসাবে 
খুবই সুস্বাদু একটি মিষ্টি নিয়ে আসে।  
এভাবেই দেশের বাইরের মানুষ 
অপরিচিতদের আপ্যায়ন করে।  
ইহুদি ও খ্রিস্টান লোকটির পেট পূর্ণ হলেও 
মুসলমান লোকটি সারাদিন রোজা রেখেছিল।

দুজন বলে–
‘এই খাবার আগামীকালের জন্য সংরক্ষণ করি।’
একজন বলে–
‘খাবার নয়, চলো আত্মত্যাগ সংরক্ষণ করি!’ 
‘তুমি কি সবটুকু নিজের জন্য চাও!’
‘এই খাবারকে তিনটি ভাগে ভাগ করো
তাহলে প্রত্যেকে তার ইচ্ছামত খেতে পারবে।’
‘কিন্তু মুহাম্মদ (স.) বলেছেন বিভাজন কোরো না।’
‘তিনি মূলত কামুকতা এবং আত্মার মধ্যে 
বিভক্ত করতে নিষেধ করেছেন। 
তোমাকে অবশ্যই একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
অবশেষে সে স্বীকার করে, 
‘আমি এটা তোমাদের মতো করে করবো।’

তারা খাবারের স্বাদ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে।  
তারা ঘুমায়, তারপর জেগে ওঠে 
এবং সকালে প্রার্থনার জন্য নিজেদের পোশাক পরে।
খ্রিস্টান, ইহুদি, মুসলিম, শামান, জরোস্ট্রিয়ান, 
পাথর, মাটি, পর্বত, নদী প্রত্যেকেরই 
রহস্যের সাথে থাকার 
একটি গোপন উপায় আছে, 
সেই পথ অনন্য এবং বিচার্য নয়।  
সেই পথ কখনো শেষ হয় না! 

সকালের মেজাজে তিনজন বলে–
‘চলো গতরাতে আমরা কী স্বপ্ন দেখেছিলাম
সেটা নিয়ে গল্প করি,
যে সবচেয়ে গভীর স্বপ্ন দেখেছে সে মিষ্টি পাবে।’
সকলেই রাজি হলো।  

ইহুদি লোকটি বলা শুরু করলো–
‘রাস্তায় আমার সাথে মোশি দেখা করলেন, 
আমি তাকে অনুসরণ করলাম সিনাই পর্যন্ত
একটি খোলা দরজা, আলোর মধ্যে আলো। 
সিনাই পর্বত, মোশি এবং আমি চাকচিক্যময়, 
তারপর আমরা নবীদের সমাবেশে মিলিত হলাম।’
এটি একটি সত্যিকারের স্বপ্ন।  
অনেক ইহুদী এমন স্বপ্ন দেখেছেন।

তারপর খ্রিস্টান লোকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, 
‘যীশু আমাকে তাঁর বাহুতে নিয়ে 
চতুর্থ স্বর্গে নিয়ে গেলেন, 
একটি বিশুদ্ধ বিস্তীর্ণ অঞ্চল।’
তার স্বপ্নটিও নিঃসন্দেহে গভীর।

এবার মুসলিম লোকটি বললো, 
মুহাম্মদ (স.) এসে জানতে চাইলেন, 
তোমরা দুজন কোথায় গিয়েছিলে।
তিনি আমাকে বললেন–
'তুমি হতভাগা, তুমি পিছনে পড়ে গেছো!
 তুমি উঠে পড়ো এবং কিছু খেয়ে নাও।’

‘না! আমরা তা খাইনি।’
এটা বলে খ্রিস্টান এবং ইহুদি লোকটি হাসলো। 
‘আমি কীভাবে এমন নির্দেশ অমান্য করতে পারি?  
তুমি কি মোশি এবং যীশুর নির্দেশ পালন করতে না?’
‘তুমি ঠিক বলেছ’ তারা বলে। 
‘তোমার স্বপ্নটি সবচেয়ে সত্যিকারের, 
কারণ এটি তোমার জাগ্রত জীবনে 
অবিলম্বে প্রভাব ফেলেছে।’

তোমার আত্মা যা নির্দেশ করে 
তুমি কতো তাড়াতাড়ি তা করতে পারো,
সেটাই হলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কবিতাঃ তিনজন ভ্রমণকারীর স্বপ্ন 
কবিঃ জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি 
অনুবাদঃ আলমগীর কাইজার 
(কোলম্যান বার্কসের দ্য সোল অব রুমি বই থেকে)

No comments

Powered by Blogger.