চারটি বিঘ্নিত প্রার্থনা - রুমির কবিতা ৩৪

চারজন ভারতীয় একটি মসজিদে ঢুকে
প্রার্থনা শুরু করল গভীরভাবে। 
একজন মুয়াজ্জিন পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, 
একজন প্রার্থনাকারী জিজ্ঞাসা করলেন–
‘আপনি কি আজান দেবেন? সময় হয়েছে?’
দ্বিতীয়জন ফিসফিস করে বলেন–
‘তুমি কথা বলেছ, তোমার প্রার্থনা ভেঙে গেছে।’
তৃতীয়জন বলেন–
‘চাচা, তাকে বকবেন না! 
আপনি নিজেও একই ভুল করছেন। 
নিজেকে সংশোধন করুন।’
চতুর্থজন বলেন, 
‘সব প্রশংসা স্রষ্টার, আমি এই তিনজনের মতো ভুল করিনি।’
চারটি প্রার্থনা-ই বিঘ্নিত হয়
এবং প্রথমজনের চেয়েও 
পরের তিনজন ভুল-অনুসন্ধানকারীর ভুল ছিল বেশি।

যে নিজের দুর্বলতা দেখতে পারে 
সে পরম সৌভাগ্যবান, 
যে অন্যের ত্রুটি দেখে নিজেকে সংশোধন করে
সে আরও বেশি সৌভাগ্যবান।
প্রতিটি মানুষের অর্ধেকটাই ভুল এবং দুর্বলতায় নিমজ্জিত 
এবং সঠিক পথ থেকে সরে যায়।
বাকি অর্ধেক অদৃশ্য আনন্দে নাচছে, সাঁতার কাটছে, উড়ছে। 
তোমার মাথায় দশটি ক্ষত,
তোমার কাছে যা-কিছু আছে
তাই দিয়েই নিজেকে সারিয়ে তোলো। 
এবং সবাইকে জানাও তুমি কেমন অসুখে ভুগছো। 
এটাই সেরে ওঠার উপায়!

যখন তুমি নিজেকে কঠিন পথ দিয়ে নিয়ে যাও
তখন তুমি আরও ক্ষমাশীল এবং জ্ঞানী হয়ে ওঠো।
বর্তমানে তুমি যদি কোনো কঠিন পথ পাড়ি না দাও
তবে তুমি খুব শীঘ্রই কুখ্যাত কোনো কাজ কোরে বসবে।
কখনো আত্মতৃপ্তি অনুভব কোরো না। 
শয়তান একসময় মহান ফেরেশতা ছিল,
এখন ভেবে দ্যাখো তার নামের অর্থ কী!
যতক্ষণ না তোমার মুখমণ্ডল থেকে
ভয়ের চিহ্ন পুরোপুরি সরে না যায় 
ততক্ষণ বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা কোরো না।  
যদি তোমার দাড়ি বড়ো না হয়ে থাকে 
তবে কারো মসৃণ চিবুক নিয়ে রসিকতা কোরো না।  
শয়তান কীভাবে আত্মার বিষ পান করেছে 
তা বিবেচনা করো,
এবং কৃতজ্ঞ হও যে 
তুমি সতর্ক হওয়ার সুযোগ পেয়েছ।

কবিতাঃ চারটি বিঘ্নিত প্রার্থনা
কবিঃ জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি 
অনুবাদঃ আলমগীর কাইজার 
(কোলম্যান বার্কসের দ্য সোল অব রুমি বই থেকে)

No comments

Powered by Blogger.