উপন্যাসিক আনিসুল হক-এর মা উপন্যাসের পর্যালোচনা

উপন্যাসঃ মা
লেখকঃ আনিসুল হক
ধরণঃ মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস
প্রকাশনীঃ সময় প্রকাশন
প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ
ভাষাঃ বাংলা
প্রকাশকালঃ ২০০৩

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক রচিত জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মা’। মা বইটি ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়।
লেখক আনিসুল হক মা বইয়ের কাহিনীর সন্ধান পান মুক্তিযোদ্ধা নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর কাছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আজাদ ও তাঁর মায়ের জীবনের সত্য ঘটনা নিয়ে রচিত এই উপন্যাসটি। প্রকাশের পর থেকেই উপন্যাসটি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় এবং প্রচুর পাঠকপ্রিয়তা পায়।
উপন্যাসিক আনিসুল হক একাধারে বাংলাদেশি কবি, লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক

ছবিঃ মা উপন্যাসের প্রচ্ছদ 

উপন্যাসের কাহিনীঃউপন্যাসটি মুক্তিযোদ্ধা মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ এবং তাঁর মায়ের জীবন নিয়ে রচিত।আজাদ তাঁর মায়ের একমাত্র সন্তান। আজাদের মা সাফিয়া বেগম ছিলেন ঢাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের স্ত্রী। তিনি ছিলেন আত্মমর্যাদাবান। তাই তার স্বামী যখন দ্বিতীয় বিবাহ করলেন, তখন তিনি তা মেনে নেননি। আজাদের মা ছোটো আজাদকে নিয়ে স্বামীর সংসার ত্যাগ করে আলাদা হয়ে যান। 

অভাব অনটনকে পেছনে ফেলে নিজ হাতে তিনি মানুষের মত মানুষ করে তুলেছিলেন আজাদকে। মা বড় কষ্ট করে লেখাপড়া শেখান ছেলেকে। আজাদ এমএ পাস করে। 
ঠিক ওই সময় দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আজাদের বন্ধুরা যোগ দেয় ঢাকার একটা গেরিলা দলে। আজাদ মাকে বলে, আমিও যুদ্ধে যাব। মা তাকে অনুমতি দেন। ১৯৭১ সালে আজাদ তাঁর বন্ধুদের সাথে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয় ।
তাদের গেরিলা দল তৎকালীন সময়ে “হিট এন্ড রান" পদ্ধতিতে অসংখ্য আক্রমণ পরিচালনা করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক ত্রাসের সঞ্চার করে । ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তানি বাহিনী রেইড চালিয়ে ক্র্যাক প্লাটুন এবং সংশ্লিষ্ট অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে যায়। আজাদের বাড়িতেও রেইড হয় , আজাদ তাঁর সহযোদ্ধাসহ ধরা পড়েন ।
অনেকের সঙ্গে ধরা পড়ে রুমী, বদি, আলতাফ মাহমুদ, জুয়েল। আজাদের ওপরে পাকিস্তানীরা প্রচন্ড অত্যাচার চালায়, তবুও আজাদের মুখ থেকে কথা বের করতে পারে না। 
আজাদের মা দেখা করতে যায় আজাদের সাথে। তখন তার মাকে বলা হয়, ছেলে যদি সবার নাম-ধাম বলে দেয়, তবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। মা ছেলেকে নামধাম বলতে নিষেধ করে দেন।
আজাদ বলে, মা আমি দুদিন ভাত খাইনি, আমার জন্য ভাত নিয়ে এসো। মা পরের দিন ভাত নিয়ে হাজির হন, কিন্তু ছেলের দেখা আর মেলে না। 
আর কোনোদিনও তাঁর ছেলে ফিরে আসেনি আর এই মা আর কোনোদিনও জীবনে ভাত খায়নি। যুদ্ধের ১৪ বছর পরে মা মারা যান, নিঃস্ব, রিক্ত-বেশে। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে কবরে শায়িত করলে আকাশ থেকে ঝিরঝির করে ঝরতে থাকে বৃষ্টি।
উপন্যাসিক আনিসুল হক এই কাহিনীটি সন্ধান পেয়ে বহুজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে, বহু দলিল দস্তবেজ ঘেঁটে রচনা করেছেন অসামান্য এই উপন্যাসটি।
যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলাদেশের মানুষ থাকবে, ততদিন এই মাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ।

সূত্রঃ উইকিপিডিয়া এবং উপন্যাসিক আনিসুল হকের মা উপন্যাস।
পর্যালোচনায় আলমগীর কাইজার

No comments

Powered by Blogger.