গল্প - মরীচিকা মায়া

ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে, ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্রীও সে। একমাস পরেই মেয়েটির এসএসসি পরীক্ষা। এমন সময় মেয়ের পেটে টিউমার ধরা পড়লো। 

অনেক দিন থেকেই মেয়ের পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা কিন্তু ক্লাস, পরীক্ষা, প্রাইভেটের চাপে মেয়েকে আর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়নি। গ্যাসের সমস্যা ভেবে গ্যাসের ওষুধ খেয়েই অনেক সময় কেটে গেছে। 

যখন মেয়ে ডাক্তারের কাছে গেলো তখন মেয়ের পেটে টিউমার। ডাক্তার বললেন অবস্থা জটিল। অনেকেই বললেন ভারতে নিয়ে যেতে। জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করতেও বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে। 

বাবা চাইলেন এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে তারপর মেয়েকে ভারত নিয়ে যাবে। বাবার কথামতো মেয়ে প্রচণ্ড কষ্ট ক'রে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করলো। ততদিনে পাসপোর্ট চলে এলো। মেয়ে তার বাবার সাথে ভারতে গেলো। 

ভারতে গিয়ে জানা গেলো মেয়ের শরীরে ক্যান্সারের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসা নিতে বেশ দেরি হয়ে গেছে। যতদূর সম্ভব হলো তারা ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলো। মেয়ের বাঁচার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে এসেছে। আত্মীয়রা সবাই দেখতে আসলো। 


মরীচিকা মায়া


মেয়েটি মৃত্যুশয্যায় শুয়ে আছে। সে মারা যাবার কথা ভাবছে না। আর একদিন পরেই রেজাল্ট। সে ভাবছে গোল্ডেন এ প্লাস পাবে কিনা! তার রেজাল্ট খারাপ হ'লে বাবা ভীষণ বকবে। ক্লাস ফাইভে সে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পাইনি, সে পেয়েছিল সাধারণ বৃত্তি। সেদিনের কথা মনে পড়ে। তার বাবা ভীষণ বকেছিল। মা ভীষণ কেঁদেছিল। 

মেয়েটি এসব ভাবতে ভাবতে দুপুরবেলা ঘুমিয়ে পড়লো। মেয়েটি আর জেগে উঠলো না। মেয়েটিকে ঘিরে অনেকেই কান্নার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করলো। আকাশও ভীষণ কাঁদলো, আকাশ থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামলো। মেয়েটি আকাশ পছন্দ করতো, বৃষ্টি পছন্দ করতো।

সন্ধ্যা হতেই মেয়েটিকে পানির ভিতর মাটিতে শুইয়ে দেওয়া হলো। মেয়েটি মাটি পছন্দ করতো, মেয়েটি পানি ভালোবাসতো।  মেয়েটি খুব ভালোভাবে জানতো একমাত্র পানিকে ভালোবেসে পুরোপুরি অবগাহন করা যায়। মেয়েটি বিশ্বাস করতো পানি ব্যতীত আর কোনো কিছুই মানুষকে এতো বেশি ভালোবাসতে পারে না।

মেয়েটি পৃথিবীর সবকিছুকে তুচ্ছ ক'রে দিয়ে তার ভালোবাসার কোলে শুয়ে থাকলো। মেয়েটির ঘরের ছাদে শেষ মাটিগুলো গুছিয়ে দিতে দিতে একজন বললেন, সন্তান জন্ম দিয়ে বাবা-মা হওয়া খুব সহজ কিন্তু সন্তানের হৃদয় ছোঁয়া এতো সহজ ব্যাপার নয়। সন্তানের হৃদয় ছুঁতে হ'লে মাটির মতো হতে হয়। 

© আলমগীর কাইজার 
১৩.০৮.২০১৯

No comments

Powered by Blogger.