প্রবন্ধ - সরকারি চাকরি, বিয়ে ও বাস্তবতা

কাউকে দোষারোপ ক’রে লাভ নেই। মনে করুন আপনি কম বেতনের চাকরি করেন, একটা বেশি বেতনের চাকরি পেয়েছেন। আপনি কি কম বেতনের চাকরি ছেড়ে যাবেন? নাকি আগের চাকরির মায়ায় জড়িয়ে সারাজীবন কম বেতনের চাকরি ক’রে যাবেন? পদোন্নতি কেনা চায় বলুন? 

আগেরদিনে গোত্রের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটি তার নামেই বরাদ্দ হ’য়ে যেতো যে সবল, শক্তিশালী, কর্মট এবং যার পেশিশক্তি ভালো। বর্তমানে মানুষ পেশিশক্তির ভয় পায় কিন্তু খুব একটা দাম দেয় না। বিয়ের বাজার বলুন আর সমাজ কিংবা পরিবার; সেই ছেলেটির দাম বেশি যার একটি সরকারি চাকরি আছে। লোকেরা আজ জানে পেশিশক্তি থাকলে ধর্ষণ করা যায় কিন্তু কর্ষণ করা যায় না। 

বর্তমান সমাজে সরকারি চাকরির মূল্য চড়া। এদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রটিও সরকারি চাকরি পেতে মরিয়া। বিয়ের বাজারে কিংবা সমাজে আপনার মূল্যায়ন হবে ঠিক এভাবে– আপনি ভালো কবিতা লিখতে পারেন, তাতে কী? সরকারি চাকরি তো পাননি। আপনি ভালো গান গাইতে পারেন, তাতে কী? সরকারি চাকরি তো পাননি। আপনি ভালো ব্যবসা করেন, তাতে কী?  সরাসরি চাকরি তো পাননি।  আপনি মোটা বেতনের বেসরকারি চাকরি করেন, তাতে কী? সরকারি চাকরি তো পাননি?

ছোটো বেলায় গ্রামে দেখেছি, লকলক ক'রে বেড়ে ওঠা সবচেয়ে সুন্দরী নন-মেট্রিক মেয়েটির বিয়ে হ'য়ে যেতো কোনো এক সৈনিকের সাথে। ছোটবেলায় সবাই (আমার বাবা-মা বাদে) আমার জন্য এই ব'লে দোয়া করতো যে, বড়ো হ'য়ে আর্মি হও। 

যখন ইন্টার পাশ করলাম তখন কোথাও চান্স না পাওয়া হতাশার মুহূর্তে সবাই বলতো– অমুকের ছেলে আর্মি হ’য়ে গেলো, তোর হোলো না, ও,,,, তোর তো হাত ভাঙা! লাইনে দৌঁড়াতে দিলে তো তুই পড়ে যাবি! আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসেনি, মানুষ মানুষকে কষ্টের ভিতর দেখলে একধরনের পৈশাচিক আনন্দ পায়, সুখী দেখলে হিংসায় জ্বলে পুড়ে যায়। কেউই চায় না, আপনি বা আপনারা সুখে থাকেন, মানুষ অন্যের সুখ সহ্য করতে পারে না।   

আমি জানি– পানি নিচের দিকে গড়ায়, মানুষ গড়ায় উপরের দিকে। মানুষের হাতে উপরের দিকে যাওয়ার অপশন থাকলে মানুষ কখনোই স্বস্থানে বসে থাকে না। আপনার সাথে তারাই থাকবে যারা আপনাকে যোগ্য এবং প্রয়োজন মনে করবে। আপনি অযোগ্য হ'য়ে গেলে আপনার ছায়াও আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে। 

অভিযোগ ক’রে লাভ নেই, দোষারোপ ক’রেও লাভ নেই। আপনি ভালো কিছু করলে লোকেরা ফুলের মালা দিয়ে বরণ ক'রে নেবে, খারাপ কিছু করলে ছেড়ে চলে যাবে। প্রকৃতির এই সহজ নিয়ম যে মেনে নিতে পারে সেই সুখী।

সব কথার পরেও কথা থেকে যায়, সেটা আমাদের মনের কথা। বাস্তবতা যায় হোক, আমাদের সবসময় এতো অকৃতজ্ঞ হ'লে চলে না। যারা আমাদের দুঃসময়ে পাশে থাকে তাদের কথা মনে রাখা উচিত। যারা আমাদের কষ্টের সময় পাশে থাকে তাদের কষ্ট দেওয়া উচিত নয়।  পৃথিবীতে কিছুই হারিয়ে যায় না, সবকিছু ঘুরেফিরে আসে। কষ্ট দিলে কষ্ট পাবে, সুখ দিলে সুখ পাবে। তবে যারা অকৃতজ্ঞ এবং যারা আমাদের পাশে দাঁড়াতে লজ্জাবোধ করে তাদের কথা ভেবে আমাদের কষ্ট পাওয়ার কোনো দরকার নেই। 

© আলমগীর কাইজার 
০৫.১১.২০১৯

No comments

Powered by Blogger.