প্রবন্ধ

পুরুষতান্ত্রিক জীবনে নারীর সংগ্রাম কঠিন কিন্তু পুরুষের সংগ্রাম মসৃণ নয়। একজন ভালো চাকর হওয়ার নেশায় এই বঙ্গদেশের লক্ষলক্ষ ছেলে লেখাপড়া করে। লেখাপড়া শেষ না হতেই পারিবারিক-সামাজিক বঞ্চনা শুরু হয়ে যায়। মনেহয় পুরুষ জন্মেছেই একজন ভালো চাকর হওয়ার জন্য বা টাকা ইনকামের মেশিন হওয়ার জন্য, আর যেনো পুরুষের জীবনের কোনো লক্ষ্য নেই।

পুরুষ হয়ে জন্মালে প্রথম দ্বন্দ্বটাই শুরু হয় বাবার সাথে, যেমন পাখির বাচ্চা বড়ো হলে ঠোঁটের আঘাতে বাসা থেকে বের করে দেয় তেমনি পুরুষের জীবনের প্রথম আঘাত আসে বাবার কাছ থেকে। এই বঙ্গদেশে বাবার সাথে সম্পর্ক ভালো এমন দৃশ্য বড্ড বিরল! যেকয়টি বাবা-ছেলের সুসম্পর্ক আছে সেই সবকয়টিতেই হয়তো বাবা সুফি-সাধু অথবা ছেলে চাটুকার, ভাঁড় কিংবা সুপারম্যান। 

পুরুষের জীবনের দ্বিতীয় দ্বন্দ্ব হলো সংসার জীবন শুরু করা। যেখানে নিজের পরিবার-সমাজের সাথেই চিরবৈরিতা সেখানে দ্বন্দ্ব শুরু হয় অন্য পরিবার বা অন্য সমাজের একজন মানুষের সাথে একসাথে থাকার লিখিত চুক্তি টিকিয়ে রাখার মাধ্যমে। এই দ্বন্দ্বে পুরুষ হয়ে ওঠে স্বৈরশাসক অথবা কারাবন্দী রাজা। আর ঠিক এমনই মুহুর্তে কোনোমতে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে করতে হয় অভিনয় যেমনটি করে থাকে স্বৈরশাসক অথবা কারাবন্দী রাজা।

প্রথম ও দ্বিতীয় দ্বন্দ্বের ভার কাঁধে নিয়েই পুরুষকে হয়ে উঠতে হয় একজন দারুণ অভিনেতা। নিজের অস্তিত্ব এবং চাওয়া-পাওয়াকে কবর দিয়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থার ভিত্তিতে চারপাশের মানুষকে খুশি করে একটা দারুণ অভিনয় শুরু করতে হয়। এই অভিনয়ে যে যতো চৌকস হয়ে উঠবে সে ততো ভালোভাবে পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রের এই বাস্তুতন্ত্রে সহজে টিকে যাবে। 

© আলমগীর কাইজার
৩০.০৩.১০২৪

No comments

Powered by Blogger.