অন্তরগত এক বেদনার নাম শূন্যতা

আমার জীবনের অন্তরগত এক বেদনার নাম শূন্যতা। এই শূন্যতার কারণ এবং পূর্ণতা খুঁজতে গিয়ে দেখি এই মহাবিশ্বে আমি এবং আমার স্রষ্টা ছাড়া আর কেউ নেই। 

এই শূন্যতা পূরণ করতে গিয়ে আমি যাকেই আশ্রয় ভেবেছি সেটাই হারিয়ে গেছে আমার কাছ থেকে, বই-বন্ধু-পরিবার সব। 

ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের জঞ্জালে আমার ছোটোবেলার কিছু সময় কেটেছে আমার নানি-বাড়ি (আমরা নানাবাড়িকে নানিবাড়ি বলতাম ছোটোবেলায়)। সুতরাং সেই বাড়ি, বাড়ির মানুষ আর গ্রামের প্রতি প্রচণ্ড মায়া আজীবনের জন্য রয়ে গেছে। মানুষের ছোটোবেলা যেখানে কাটে সেটাকেই মানুষ বয়ে বেড়ায় আজীবন। 

আমার বাবা কখনো আমাকে গ্রহণ করিনি, একসাথে থেকেছি, আমার জীবনের সমস্ত ব্যায়ভার তিনিই বহন করেছেন কিন্তু কোনোদিন তার স্পর্শ আমার শরীর পায়নি, দুএকবার হয়তো দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার স্পর্শ পেয়েছি যখন আমাকে পেটাতে-পেটাতে লাঠি ভেঙে যেতো তখন। আমার বাবার মগজের সমস্ত দারিদ্রতা চাবুক হয়ে ঝরতে থাকতো পরিবারের সবার উপর।

করোনা শুরু হওয়ার একবছর পর তখনো মানুষ মানুষের কাছাকাছি যেতো না, স্পর্শ করতো না, কেউ কারোর বাড়ি যেতো না, তখন দূর্ভাগ্যবশত আমি বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হই। বেকার-অকর্মণ্য-প্রতিবন্ধী সন্তানকে আর বাড়িতে রাখা সম্ভব নয়।

আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই, খুঁজতে থাকি মাথা গোঁজার ঠাঁই, যুদ্ধে পরাজিত রাজা যেমন মুখ লুকিয়ে পৃথিবীর বুকে আশ্রয় চায় ঠিক তেমনি। আমি আমার সেই ছোটবেলার নানিবাড়িও ফিরতে পারিনি, মামারা তাদের কোনো বোন নেই বোলে স্বীকারোক্তি দিয়ে বোনকে অস্বীকার করেছে সম্পত্তির হিসেব-নিকেশে, সুতরাং সেখানে গিয়েও দুএকদিনের বেশি থাকা সম্ভব নয়।

সব হারিয়ে যখন আমি টালমাটাল ঠিক এমন সময় আমার এক বন্ধু এসে হাজির হয় দেবদূতের মতো, আমাকে লোভ দেখায় আলো-ঝলমল এক জীবনের। আমি তার প্রলোভনে পা দিই, নেমে পড়ি জীবনযুদ্ধে, জড়িয়ে পড়ি জুয়ায়। এই জুয়ায় জিতের চেয়ে হার বেশি, তবুও খেলে যাই। কখন রাত নামে, কখন সকাল হয়, কী করা উচিত, কী করা অনুচিত, এখন আর কিছুই টের পাই না। পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়া আমি এক ধূলিকণা, উড়ছি আর কেবল উড়ছি।

(পারসিক এক যুবকের গল্প,
ইংরেজি ভাষা থেকে অনুবাদকৃত) 
অনুবাদঃ আলমগীর কাইজার

No comments

Powered by Blogger.