বহুগামিতা এবং কিছু কথা

বহুগামিতা এবং কিছু কথা

বহুগামিতাঃ
বহুগামিতা শুধু মানুষেরই সহজাত প্রবৃত্তি, নাকি সকল জীবকুলেরই সহজাত প্রবৃত্তি?
বহুগামিতার প্রতি এই যে সহজাত আকর্ষণ, এটা কি নারী পুরুষ নির্বিশেষেই নাকি শুধু নারী বা পুরুষের?

কাতারের দোহা কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মার্টিন স্টুয়ার্ট এক গবেষণায় ৫০০পুরুষের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ এঁদের মধ্যে তিনি ২৭ ধরনের পুরুষের খোঁজ পেয়েছেন৷ তাঁর ধারণা হয়েছে, বিবর্তনের ধারাই আসলে পুরুষকে প্রতারক করে তুলেছে৷
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ বলেছেন, জীবনে কখনো না কখনো তাঁরা স্ত্রী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন৷ ২৭ শতাংশ উত্তরদাতা এ কাজটি করেছেন তাঁদের বর্তমান সঙ্গিনীর সঙ্গেই৷ আর তাঁদের সবাই এমন আচরণের পেছনে কোনো না কোনো যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন৷
প্রশ্নটি তখনই ওঠে যখন কোনো নারী হঠাৎই আবিষ্কার করেন যে, তাঁর স্বামী বা প্রেমিক অন্য কোনো নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন এবং ক্রমাগত মিথ্যে বলে যাচ্ছেন৷
‘‘আমরা আজ যে আচরণ করছি – অনেক ক্ষেত্রে তার শেকড় প্রোথিত সুদূর অতীতে – আমাদের আদি পুরুষের মধ্যে৷ তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় – আদি পুরুষেরা কেন বহুগামী হতেন? বিবর্তনবাদ অনুযায়ী, এর একটি উত্তর হতে পারে প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদ৷''
স্টুয়ার্টের মতে, বিবর্তনের ধারায় পুরুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে, শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অধিকাংশ পুরুষের মধ্যেই কম-বেশি অবিশ্বস্ত হওয়ার প্রবণতা রয়ে গেছে৷
গবেষণা থেকে জানা যায়, ঐ ২৭ ধরনের পুরুষের মধ্যে কোনো কোনো ধরনের পুরুষের অবিশ্বস্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি৷ সুতরাং সম্পর্কে জড়ানোর আগে নারীদের ভাবতে হবে – কোন ধরনের পুরুষের সঙ্গে তিনি যাচ্ছেন৷
স্টুয়ার্টের এই ২৭ ধরনের পুরুষের মধ্যে একটি হলো সুযোগসন্ধানী৷ অর্থাৎ, কারো সঙ্গে শরীরী প্রেমের কোনো সুযোগই এঁরা ছাড়তে চান না৷ পরিণতি কী হবে – সেটাও তাঁরা ভেবে দেখেন না৷
আরেক জাতের পুরুষ আছে, যাঁরা দুর্বলতার সুযোগ নেন৷ এঁরা সব সময় পরিস্থিতিকে নিজের পক্ষে নিতে চান এবং নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য পরিবারের সদস্য, বন্ধু, স্ত্রী বা সঙ্গিনীর কাছ থেকে দুর্বলতাকে ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করেন৷
অবশ্য সব আশা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি৷ স্টুয়ার্ট বলছেন, সমীক্ষায় তিনি বহু পুরুষ দেখেছেন, যাঁরা এখনো সঙ্গিনীর প্রতি সৎ, বিশ্বস্ত, পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল এবং মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রাখেন৷

আমাদের ধনতান্ত্রিক ভোগবাদী দুনিয়ার প্রেক্ষিতে আমরা ক্রমেই পেতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি! তাই প্রাপ্তির কোটা পুরোপুরি পুরণ না হলেই মনের মধ্যে জমে ওঠা ক্ষোভের বিক্ষুব্ধ বাষ্প অসহিষ্ণু করে তোলে আমাদের! সেই অসহিষ্ণুতার অস্থিরতায় খেয়ালই থাকে না যে, আমার দেওয়ার কোটায় আর একজনের অপ্রাপ্তির ব্যথা বেদনা রয়ে গেল কিনা!

বহুগামিতা বা পলিগামি এক ধরনের যৌনবিকৃতি । যা মানুষের স্বাভাবিক অবস্থা থেকে ধংসের পথে নিয়ে যায়। ব্যাক্তিত্বে এসে ভর করে মারাত্মক অহংবোধ ও বিকৃত রুচি । মানুষের স্বভাবজাত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো তখন বিলুপ্ত হতে থাকে । যা চাওয়ার তার থেকে অধিক কিছু পাবার যে প্রতিক্রিয়া হিসেবে মানুষের মধ্যে কামলিপ্সা জাগায় তার সবটা যৌনবিকৃতি। যৌনবিকৃতির সবটাই মানসিক ব্যাধি।
তবে অন্য সব ব্যাধি থেকে এর আকর্ষন দুর্বার । এর প্রভাবে নারী পুরুষের চিরায়ত সুন্দর সম্পর্ক থেকে, সমাজ থেকে ছিটকে পড়তে পারে যেকোনো মূহুর্তে।

ছেলে কম নাকি মেয়ে বেশি উসকে দিচ্ছে বহুগামিতা?
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মানে তো এই ঘটনাই ৷ চ্যাট বক্সে অল্প অলাপে প্রথম ধাপ পাস, তারপর ফোন নাম্বার নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে লম্বা চ্যাট ৷ ছবি দেওয়া-নেওয়া, ফের ‘চলো না একদিন দেখা করি !’ তবে অ্যাপ তৈরির কারাখানায় মিটিং-সিটিংয়ের ব্যাপার হোয়াটঅ্যাপ আলাপ বেশ লম্বা প্রসেস ৷
এ ঘটনা আজকাল হামেশাই ৷ শহুরে ভাষায় যার নাম ‘হুক আপ’ বা ‘ফিশিং’ ৷ ঠিক যেন ছিপ ফেলে মাছ ধরা ৷ আর এই মাছ ধরার খেলায় রোজই একে একে বাজারে আসছে নতুন অ্যাপস ৷ কিন্তু হঠাই ইয়ংজোন মাতল কেন এই মিটিং-শিটিং অ্যাপে! গবেষকরা জানাচ্ছেন, এর পিছনে শুধুই যে মানুষের প্রবৃত্তি রয়েছে তা নয় ৷ মেয়ে-পুরুষের বেঠিক অনুপাতই উসকে দিচ্ছে ‘হুকআপ’কে ! ব্যাপারটা একটু খোলসা করে বলা যাক ৷
নিউইর্য়কে হওয়া এক গবেষাতে দেখা গিয়েছে ৷ কলেজ, স্কুল, অফিসে যদি পুরুষের থেকে বেশি সংখ্যক মেয়ে থাকে ৷ সেক্ষেত্রে হুকআপের সুযোগটা সবচেয়ে বেশি ৷ অন্যদিকে গবেষণায় এটাও দেখা গিয়েছে, যে কলেজ, স্কুল বা অফিসে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের সংখ্যা বেশি, সেখানে হুকআপের ঘটনা তুলনায় কম! গবেষকদের মতে, ছেলেদের থেকে মেয়েরাই বেশি হুকআপ করতে পছন্দ করেন ৷ আর পিছনে রয়েছে হিংসা, অহংকার ৷ অন্যদিকে একমাত্র প্রেমে আঘাত পেয়েই নাকি পুরুষেরা বহুগামিতার দিকে এগিয়ে যায় ৷ তবে এসব বাদ রেখে ছেলে-মেয়ের অনুপাতকেই দুষছেন গবেষকরা ৷

পেসিমিষ্টিজমঃ
পেসিমিষ্টিজম বা বিষন্নতা ও হতাশাবোধ নারীদের মােরাত্মক মানষিক ব্যাধি । ঈভটিজিং,চাকুরি সংকট,আর্থিক অসচছলতা ,এবং মাত্রতিরিক্ত আশা পোষণের কারণে,প্রতিবেশীদের সঙ্গে প্রতিযোগীতার কারনে, ব্যর্থতার কারণে একসময় নিজেদেরকে মূল্যহীন মনে হয়। অধিকাংশ সময় অভিভাবকদের অজ্ঞতা ও নিকটাত্মীয়দের দ্বারা যৌন নিপীড়ন, স্বামীর পরকীয়ার কারনে এই রোগে আক্রান্ত হয়।

মিষ্টিজমঃ
মিষ্টিজম বা অতীন্দ্রয়তাবাদ । হতাশাগ্রস্থ লোকেরা ঝাড়ফুক,তবিজ-কবজ,মাদুলীতে বিশ্বাস করে ।গুরুর আশ্রয়ে শান্ত সুন্দর জীবন ধারনের আশায় কবিরাজ ও পীরফকিরের কাছে ধর্না দেয়। এরা আর্থিকভাবে অনেক সময় প্রতারিত হয় । মিষ্টিজমের ছত্রছায়ায় সংসারের জরুরী কর্তব্যকে অবহেলা করছেন । এসব কারনে সমাজে বিয়ে বিচ্ছেদ ও মা-বাবার হাতে সন্তান খুনের ঘটনা বাড়ছে।

বহুগামিতা, পেসিমিস্টিজম, মিষ্টিজমের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে নারী বা পুরুষকে সামাজিক ও আইনের অনুশাসন মানতে হবে। কখনো হীনমন্য হওয়া চলবে না ।এক্ষেত্রে পারিবারিক পরিবেশ সুস্থির স্বাভাবিক করতে হবে। সমাজ সমাজের নিয়মে চলে, মানুষ সমাজবদ্ধ হতে গিয়ে কিছু নিয়মরিতি তৈরী করেছে, যা উপেক্ষা করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় ।
তাই সামাজিক রীতির বাহিরে গিয়ে নিষিদ্ধ ক্ষেত্রে পদচারনা করতে গেলে মানুষকে চরম মূল্য দিতে হয় ।বিপথগামিতা নয়, মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটলেই সমাজের কাঠামোটি সর্বাঙ্গে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠবে ।

No comments

Powered by Blogger.