আমাদের সমাজে ছেলেমেয়ের অবস্থান -০১

আমাদের সমাজে ছেলেমেয়ের অবস্থান - ০১
-আলমগীর কাইজার

যে মেয়েটি তেলাপোকা, টিকটিকি, ভুত-পেতনি, অন্ধকার দেখে ভয় পায় সেই মেয়েটিকে সমাজের সবাই ভালোবাসে, প্রশংসা করে। বাবা-মা মেয়ের ভীরুতা নিয়ে আনন্দিত হয়, গর্ব করে। ভাইয়েরা বোনকে ভয় দেখিয়ে কাজ কিংবা ভালোবাসা আদায় করে। সহপাঠীরা মেয়েদের ভীরুতা নিয়ে ঠাট্টা করে মজা পায়।
কিন্তু ছেলেদের বেলায় ভিন্ন। ছেলেটি যদি সাপ, বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ দেখেও ভয় পায় তবে সবাই ছেলেটিকে কাপুরুষ বলে। আমাদের সমাজে মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ার নামই পুরুষত্ব, মানুষকে বিশেষ করে নারীকে আঘাত করতে পারার নামই পুরুষত্ব।
একটা ছেলে কেনো মৃত্যু দেখে ভয় পাবে? একটা ছেলে কেনো ধ্বংস দেখে ভয় পাবে? একটা ছেলে কেনো যুদ্ধ কিংবা অস্ত্র দেখে ভয় পাবে? আমাদের সমাজে ভয় পাওয়া পুরুষের ধর্ম নয়, ভয় পাওয়া নারীর ধর্ম।



আমাদের সমাজে জন্ম নেয়া ছেলেমেয়েরা জন্মের পূর্ব থেকেই বৈষম্যের স্বীকার হয়। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা আগে থেকেই জানতে পারি মায়ের পেটের ভিতর যে সন্তান আছে সেটা ছেলে না মেয়ে। যদি ছেলে হয় তবে মায়ের সেবাযত্ন বেড়ে যায় আর যদি মেয়ে হয় তবে বাড়িতে কেউ একজন যে গর্ভবতী নারী আছে সেটাই পরিবারের সবাই ভুলে যায়।
সন্তান প্রসবের পর নারী যদি ছেলে সন্তান জন্ম দেন তবে সবাই সেই নারীকে বীরের চোখে দেখে, বাড়ির সবার মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়, বংশের বাতি জ্বলে ওঠে, সারা পাড়া মিষ্টিতে মিষ্টিতে ছয়লাপ হয়ে যায়। আর যদি নারী মেয়ে সন্তান প্রসব করেন তবে সবাই সেই নারীকে বাঁকা চোখে দেখে, বাড়ির সবার মুখ কালো হয়ে যায়, বংশের বাতি নিভে যায়, বাড়িতে কোনো মিষ্টি আসেনা, কেউ জানতেও পারেনা পৃথিবী বুকে নতুন অতিথি এসেছে যার উপর ভর করেই মানব সম্প্রদায় আগামীর পথে ভ্রমণ করবে।
একটা মেয়ে যখন বড় হতে থাকে তখন সে তার মাকে দেখে শিখতে থাকে তার অবস্থান কোথায়, কি কি কাজ তার উপর ধার্য করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে তার কি কি কাজ করতে হবে।
ঠিক তেমনি একটা ছেলে শিখতে থাকে তার বাবাকে দেখে, ছেলেটি ছোটবেলা থেকেই তার বাবার চরিত্রে অভিনয় করতে শুরু করে।
ছোটবেলাতে মেয়েরা যেসব কাজগুলো খেলার ছলে অবচেতন মনে করতে থাকে সেগুলো তার মায়ের কাজ কিন্তু ছেলেরা যেসব কাজ করতে শুরু করে যেগুলো তার বাবার কাজ। আর এভাবেই ছোট থেকে শিশুরা মানুষ হওয়ার বদলে নারী-পুরুষ হয়ে ওঠে।

২৮.০৭.২০১৮






No comments

Powered by Blogger.