গল্প - পাত্রী চাই
কিছুদিন পরেই অভীকের বিয়ে। অভীক সব কিছুই গুছিয়ে নিয়েছে কিন্তু বিয়ের পাত্রী নিয়ে ভীষণ দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে।
অভীকের পরিবার পাত্রী হিসেবে যাদেরকে নির্বাচন করে বা করেছে তারা অভীকের কাছে নিতান্ত বাচ্চা মেয়ে ব'লে মনে হয়। এমন একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে বিয়ে করা, বাসর, সংসার, এসব ভাবতেই অভীকের গা গুলিয়ে যায়।
বহুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যখন সে পত্রিকায় পাত্রী চাই কিংবা পাত্র চাই নামে বিজ্ঞাপন দেখত, তখন সে এই ব'লে ঠাট্টা করত যে, একটা মানুষ কতটা অযোগ্য আর অসামাজিক হ'লে তাকে পাত্রী খোঁজার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হয়! বিজ্ঞাপন দিয়ে কি আর পাত্রী পাওয়া যায়?
পাত্রী চাই
আজ অভীকের একটা পাত্রী দরকার। বিয়ের পাত্রী। অভীকের মনে পড়ে তার বাল্য প্রেমিকা ইশিতার কথা। তাকে কখনো ভালোবাসি কথাটা বলা হয়ে ওঠেনি কিন্তু তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো। অভীক যাকে বহুবার কচুরিপানা আর হলুদের ফুল এনে দিয়েছিল।ইশিতার বড় মেয়ে এবার এসএসসি পাস করেছে।
হঠাৎ অভীকের ফোনে একটা নতুন নাম্বার থেকে কল আসে। অভীক ভাবে নিশ্চয়ই কোনো মেয়ে বা মেয়ের অভিভাবকের কল। কল ধরে কিন্তু না, কোনো মেয়ে নয়, মেয়ের অভিভাবকও নয়। অফিশিয়াল কল।
কতবার ইদের ছুটি চলে যাচ্ছে, অভীকের বিয়ে আর হচ্ছে না। প্রতিবারই অভীক ভাবে এবারের ছুটিতে সে বিয়েটা করে ফেলবে কিন্তু সে আর হলো না। কপাল মন্দ। এই বয়সে নিজের বয়সের একটা মেয়ে খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর।
অভীক তার ফুফাতো বোন রুপির কথা মনে করে। রুপির বিয়ে হয়েছিল, একটা মেয়েও আছে। ওর হাজব্যান্ড অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে। রুপি একটা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। রুপি কি অভীককে বিয়ে করবে? এমন প্রস্তাব দেওয়া মুশকিল ব্যাপার। হয়তো ভাববে তার চাকরির জন্য অভীক তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে।
অভীকের একমাত্র চাচিমা বলেছিলেন, বিয়ে নিয়ে টেনশন না করতে। একটা ভালো চাকরি পেলে সে নিজে দেখে, নিজ দায়িত্বে অভীকের বিয়ে দিয়ে দেবে কিন্তু চাচিমার কি আর মনে আছে সে কথা? চাচিমা হয়তো নিজের সংসার নিয়ে এখন ভীষণ ব্যস্ত।
অভীকের মাথায় এলো ওর মামাতো বোন শিশির কথা। শিশি ওর বড়ো মামার একমাত্র মেয়ে। শিশির গায়ের রং কালো কিন্তু দেখতে বেশ সুন্দর। অনেকবার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে কিন্তু বিয়ে হয়নি। অভীক যদি শিশিকে বিয়ে করে তবে অনেক কথাই শুনতে হবে। লোকে হয়তো বলবে সম্পত্তির লোভে বিয়ে করেছে। কেউ হয়তো বলবে করুণা করে বিয়েটা করেছে। সবচেয়ে বড়ো কথা, অভীকের মামা বিয়েটা দেবেন না।
অভীকের মনে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বান্ধবী ইরিনার কথা। দেখতে মোটামুটি, বেশ মেধাবী একটা মেয়ে, ভালো একটা জব করে কিন্তু এখনো বিয়ে করেনি। এখন যদি ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয় তাহলে কী ভাববে? হয়তো ভাববে তার অবস্থানের লোভে অভীক তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে।
অভীক এমন আরো বেশ কয়েকটি মেয়ের কথা ভাবে। সবাই কোনো না কোনো ভাবে তার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। এদের যে কাউকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে কেউই মেনে নেবে না। একদিন ওরা সবাই অভীকের খুব কাছাকাছি ছিলো কিন্তু এখন নেই। মানুষ যত বড়ো হয়ে যায় ততই দূরে সরে যায়, তারপর কাছে আসতে চাইলে বিড়ম্বনা বাড়ে।
সব শেষে অভীকের মনে পড়ল নিশুতির কথা। যার সাথে সে তিন ঘন্টা সময় ধরে জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছিল। নিশুতি তাকে বলেছিল লোকেরা এখানে আসে সুখ কিনতে আর তুমি এসেছ দুঃখ কুড়াতে, গল্প শুনতে? তুমি ভীষণ পাগল একটা মানুষ। চলো, তোমাকে একটু আদর করে দিই। অভীক সেদিন নিশুতিকে ছুঁতে দেয়নি কিন্তু আজ নিশুতির কথা বেশ মনে পড়ছে। তাকে কি এখন খুঁজে পাওয়া যাবে?
আজ সারাদিন এসব ভাবতেই অভীকের দিন কেটে গেল। সন্ধ্যা হয়েছে। অভীক রাস্তায় নেমে আসে। ল্যাম্প পোস্টের লাইট জ্বলছে। অন্ধকার নেমেছে। শহরের গাড়িগুলো দ্রুতবেগে ছুটে চলছে। একটা মেয়ে দরকার। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছো, একটা মেয়ে চাই। এই সমাজ, এই শহর, এই দেশ, এই পৃথিবী কিংবা এই মহাবিশ্ব, কেউ কি একটা মেয়ে দিতে পারবে?
© আলমগীর কাইজার
৩১.০৭.২০১৯
No comments