আমরা বন্ধুর কণ্ঠে যা শুনি - রুমির কবিতা ৪২
তুমি যদি আমার আত্মার বন্ধু হও,
তাহলে আমি যা বলি
তা শুধু আমার দাবি নয়।
তুমি হয়তো মধ্যরাতে
আমার কথা শুনতে পাবে,
অন্ধকারে বেরিয়ে এসো
ভয় পেয়ো না।
‘ঘনিষ্ঠতা’ এবং ‘আত্মীয়তা’
এগুলো একধরনের দাবি,
কিন্তু কণ্ঠস্বর দাবি নয়।
বন্ধুর কণ্ঠস্বর শুনে বন্ধু আনন্দ অনুভব করে
যখন সেই কণ্ঠস্বর ঘনিষ্ঠতা এবং আত্মীয়তার দাবিদার।
এমন কিছু লোক আছে যারা
একটি কণ্ঠের মধ্যে সারমর্ম যা বলা হচ্ছে তা শুনতে পায়
আবার এমন লোক আছে যারা তা শুনতে পায় না।
আরবি বলতে বলতে বড়ো হওয়া কেউ যখন
আরবি ভাষায় বলে, ‘আরবি আমার মাতৃভাষা,’
তুমি জানো এটা সত্য।
অথবা কেউ যখন সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখে–
‘আমি পড়তে ও লিখতে পারি’
তখন সেই লেখাটি প্রমাণিত সত্য।
একজন সুফি বলতেই পারে,
‘গতরাতে তুমি আমাকে দেখেছিলে
প্রার্থনার চাদর কাঁধে নিয়ে কাঁদতে।
আমি তখন আত্মদর্শনের ব্যাপারে কিছু বলেছিলাম
যা তোমাকে পথ দেখাবে।’
তোমার স্বপ্নময় আত্মা বলে, ‘হ্যাঁ!’
এমন নিশ্চয়তা ঠিক যেন তোমার হারানো উট।
তুমি মনোযোগ দিয়ে শোনো
যখন কেউ বলে সে উঠটিকে দেখেছে,
কিন্তু তুমি আলাদাভাবে অনুভব করবে
যদি কেউ সেই উঠটিকে তোমার সামনে নিয়ে আসে।
পিপাসিত মানুষকে তুমি
এক কাপ ঝর্ণার পানি দাও,
পিপাসিত মানুষটি কি সনদ চাইবে
যে সনদ প্রমাণ করবে, ‘পানির উৎস কোথায়?’
একটি শিশু কি তার মায়ের কাছে স্তন সম্পর্কে সনদ চায়?
আত্মার স্বাদের তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত কোনো সম্প্রদায়ে
যখন প্রকৃত মানুষ আবির্ভূত হয়,
তখনই তারা সেই কন্ঠে শুনতে পায়
আমি কাছাকাছি আছি।
কবিতাঃ আমরা বন্ধুর কণ্ঠে যা শুনি
কবিঃ জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি
অনুবাদঃ আলমগীর কাইজার
(কোলম্যান বার্কসের দ্য সোল অব রুমি বই থেকে)
No comments